বৃক্ষরোপণ ও বনায়ন (২০ পয়েন্ট)

  পয়েন্ট সমূহ
(লোড হচ্ছে...)


    Image by USA-Reiseblogger from Pixabay


    ভূমিকা:

    বৃক্ষকে বলা হয় পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্বের পূর্বশর্ত। অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি আমাদের এই পৃথিবী। আর এই পৃথিবীকে সবুজ-শ্যামলা শস্য শ্যামলা করে তুলেছে হাজার হাজার বৃক্ষরাজি।এই পৃথিবীকে বাসযোগ্য করে তুলতে গাছপালার রয়েছে এক অনস্বীকার্য ভূমিকা। তাছাড়া আমাদের জীবনের বেশিরভাগ মৌলিক চাহিদাগুলোই পূরণ করে থাকে গাছপালা। কবির ভাষায়"দাও ফিরিয়ে সে অরণ্য, লও এ নগর" - কবির সেই আকুতি আজকের এই যুগে অরণ্যে রোদন হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ প্রতিনিয়ত মানুষ কেটে সাফ করছে বনজঙ্গল ও জনজীবনকে হুমকির মুখে ফেলছে। তাই প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি গ্রহণ করা খুবই জরুরি।


    বৃক্ষরোপণ:

    গাছপালাকে আমাদের পরম বন্ধু বলা হয়। কারণ গাছপালা ছাড়া এই পৃথিবীতে আমাদের বেঁচে থাকা পানিতে লোহা ভেসে যাওয়ার মতো অসম্ভব। তাই গাছপালা সংরক্ষণে ও পৃথিবীকে বাঁচাতে হলে আমাদের গাছ লাগাতে হবে এবং গাছপালা লাগাতে জনগণকে সচেতন করতে হবে। গাছপালা লাগানোর এই কর্মসূচিকেই বলা হয় বৃক্ষরোপণ।

    বনায়ন:

    বন কথাটি শুনলেই আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে সারি সারি ও ঘন বৃক্ষরাজি। কিন্তু আজকাল মানুষ যেভাবে বন জঙ্গল কেটে সাফ করছে সেইভাবে চলতে থাকলে এই বনের দেখা হয়তো আর বেশিদিন পাওয়া যাবে না। তাই এই বনকে উজাড় না করে নতুনভাবে বন তৈরি করার জন্য বেশি বেশি গাছ লাগাতে হবে। আর এইভাবে একটি থেকে দুটি, দুটি থেকে চারটি করে গাছ লাগাতে লাগাতে বন তৈরির প্রক্রিয়াই হলো বনায়ন।

    বাংলাদেশের বনাঞ্চল:

    বাংলাদেশ সবুজ শ্যামল দেশ। এদেশের প্রায় ১৬ ভাগ অঞ্চল জুড়ে আছে বনভূমি।আর বাংলাদেশের এই বনাঞ্চলকে প্রধানত তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা: ক্রান্তীয় চিরহরিৎ বনভূমি, শালবন বনভূমি ও স্রোতজ বনভূমি। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের চট্টগ্রাম, পার্বত্য জেলাসমূহ ও উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে ১৫ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে রয়েছে ক্রান্তীয় চিরহরিৎ বনভূমি। তাছাড়া ভাওয়াল ও মধুপুর গড় এর প্রায় এক হাজার বর্গ কিলোমিটার এবং ময়মনসিংহ, গাজীপুর, টাঙ্গাইল, রংপুর, দিনাজপুর, কুমিল্লার একটি বিশাল এলাকা জুড়ে রয়েছে শালবন। আর দেশের দক্ষিণ অঞ্চলের সমুদ্রের উপকূলবর্তী বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে বিরাজমান সুন্দরবন-ই হচ্ছে স্রোতজ বনভূমি।


    বাংলাদেশের বনভূমির পরিমাণ:

    বিজ্ঞানীদের মতে প্রতিটি দেশের প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় কমপক্ষে ২৫ ভাগ বনভূমির প্রয়োজন। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই যে আমাদের দেশে মাত্র ১৬ ভাগ অঞ্চল বনভূমির অন্তর্গত যা বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়। তাছাড়া সরকারি হিসাব বলছে বাংলাদেশে বনভূমির পরিমাণ মাত্র ৯% এবং (FAO) এর মতে এটি ১১.১%। আবার অন্য একটি জরিপ অনুযায়ী বাংলাদেশের উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বনভূমির পরিমাণ মাত্র ৩.৫%। ক্রমাগত এইভাবে বৃক্ষ কমে যাওয়ায় নানান বিরূপ প্রতিক্রিয়া ঘটছে আমাদের দেশে। প্রাকৃতিক নানা দুর্যোগ এখন বাংলাদেশে নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। ক্রমাগত বৃক্ষ নিধনের ফলে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে বেড়ে যাচ্ছে গ্রীনহাউস প্রতিক্রিয়া।

    বনায়ন বা বৃক্ষের প্রয়োজনীয়তা:

    বিশ্বব্যাপী একটি সংস্থা World Research Institute এর মতে বিশ্বের বনভূমির পরিমাণ অর্ধেকে এসে দাঁড়িয়েছে। এর ফলে সারা বিশ্ব এখন চরম হুমকির মুখে। গাছপালাকে আমাদের পরম বন্ধু বলা হয়। কারণ, দৈনন্দিন জীবন ও আমাদের জীবনের প্রায় প্রতিটি কাজে ও প্রতিটি পদক্ষেপে গাছপালা আমাদের সাহায্য করে থাকে। গাছপালা ব্যতীত এই পৃথিবীতে আমাদের জীবনধারণ অসম্ভব। তাই আমাদের জীবনে গাছপালা বা বৃক্ষের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।

    জীবন ও পরিবেশ রক্ষায় বৃক্ষের প্রয়োজনীয়তা:

    বৃক্ষ তার ছায়া দিয়ে পৃথিবীর তাপমাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে রাখে। বড় বৃক্ষ ছায়া দিয়ে পুকুর ও জলাশয়ের পানিকে সহজে বাষ্প হতে দেয় না। গাছের পাতা তার অতিরিক্ত পানি পাতার মাধ্যমে বাষ্পাকারে বায়ুমণ্ডলে ছেড়ে দেয় যা বৃষ্টিপাতে সহায়তা করে। তাছাড়া বৃক্ষ নিজে কার্বন-ডাইঅক্সাইড গ্রহণ এবং অক্সিজেন ছেড়ে দেবার মাধ্যমে মানুষ ও অন্যান্য জীবের অক্সিজেনের চাহিদা পূরণ করে থাকে। এভাবে গাছপালা অন্যান্য জীবের নিঃশ্বাসের বায়ু গ্রহণের মাধ্যমে আবহাওয়া ও জলবায়ু নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। অন্যদিকে গাছপালা মাটির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি করে ও নদীভাঙ্গন রোধে ভূমিকা পালন করে।

    মানব জীবনে বৃক্ষের প্রয়োজনীয়তা:

    মানবজীবনে বৃক্ষের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। মানুষের খাদ্য যোগানের জন্য বৃক্ষ প্রধান ভূমিকা পালন করে। মানুষ উদ্ভিদের ফল, লতাপাতা খেয়ে বেঁচে থাকে। গাছ মানুষের বেঁচে থাকার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান অক্সিজেন এর একমাত্র উৎস। এই জীবন রক্ষাকারী উপাদান ছাড়া মানুষ এক মুহূর্তও বেঁচে থাকতে পারে না। মানুষ তাপ উৎপাদনের ক্ষেত্রে ও রান্নার জ্বালানির জন্য প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বৃক্ষের উপর নির্ভরশীল। তাছাড়া ঘরের আসবাবপত্র থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্থাপনার জন্য ব্যবহৃত কাঠ আমরা বৃক্ষ থেকেই পেয়ে থাকি। বৃক্ষ থেকে কাগজের মন্ড, দিয়াশলাইসহ বিভিন্ন পণ্য তৈরি হয়। বনভূমি থেকে মধু ও মোম পাওয়া যায়। জীবন রক্ষাকারী নানান ঔষধ তৈরিতেও উদ্ভিদের দরকার হয়।

    বৃক্ষরোপণের স্থান:

    বৃক্ষরোপণের স্থান বলতে নির্দিষ্ট কোনো জায়গা নেই। তবে একটি নিয়ম মেনে গাছ লাগালে সেটি উপকারী ও সৌন্দর্যবর্ধক হয়। যেমন রাস্তার দুই পাশে সৌন্দর্যবর্ধক পাতাবাহারের গাছ কিংবা ফুলের গাছ লাগানো যেতে পারে। বাড়ির আঙিনায় নানান শাকসবজির গাছ ও স্কুলের আঙিনায় নানান ফুলের গাছ লাগানো যেতে পারে। নদীর পাশের লাগাতে হবে বড় বড় গাছ । কারণ সেগুলো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় রক্ষা পেতে কাজে লাগে।

    গাছ লাগাও পরিবেশ বাঁচাও:

    গাছপালা যে শুধু মানুষ বা অন্যান্য জীবের কাজে লাগে তা কিন্তু নয়। এটি সম্পূর্ণ পৃথিবীর ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করে। এটি পৃথিবীতে কার্বন-ডাইঅক্সাইড ও অক্সিজেনের ভারসাম্য বজায় রাখে। যেসব যায়গায় গাছপালা বেশি থাকে সেসব জায়গায় বৃষ্টিপাত বেশি পরিমাণে হয়। গাছপালা নানান প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে পরিবেশকে রক্ষা করে। মাটির উর্বরতা ঠিক রাখে। তাছাড়া নদী ভাঙন, পানি স্ফীতি ও বৃষ্টিপাত নিয়ন্ত্রণেও গাছ মুখ্য ভূমিকা পালন করে। তাই গাছ লাগানোর মাধ্যমের আমাদের জীবন রক্ষায় উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন।

    বৃক্ষরোপণ অভিযান:

    আমাদের দেশের বনজ সম্পদকে টিকিয়ে রাখার জন্য এদেশে প্রতিবছর বৃক্ষরোপণ সপ্তাহে একটি বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হয়। এই সময়ে সারাদেশে পরিকল্পিত উপায়ে বৃক্ষরোপণ করা হয়। সাধারণত প্রতিবছর বর্ষাকালে বৃক্ষরোপণ অভিযানটি পরিচালনা করা হয়। এসময় সাধারণ জনগণ নিকটস্থ নার্সারি থেকে বিনামূল্যে কিংবা খুবই স্বল্পমূল্যে গাছের চারা সংগ্রহ করতে পারে। তখন জনগণকে বৃক্ষের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বিভিন্ন বক্তব্য প্রদানের মাধ্যমে সচেতন করা হয়। তাই বলা যায় বৃক্ষরোপণ একটি মহৎ প্রচেষ্টা।

    বৃক্ষরোপণ অভিযান সফল করার উপায়:

    বৃক্ষ রক্ষা আমাদের জীবন রক্ষারই সামিল। শুধু সরকার নয়, বৃক্ষরোপণ অভিযানকে সফল করার জন্য জনগণকেও এগিয়ে আসতে হবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ বন বিভাগ বৃক্ষের চারা উৎপাদন করে বিনামূল্যে তা জনগণের নিকট সরবরাহ করার ব্যবস্থা করতে পারে। গাছ লাগানোর জন্য জনমত তৈরি করবে এবং জনমতে চেতনা সৃষ্টি করবে। এ ব্যাপারে ইলেকট্রনিক মিডিয়া ব্যাপক ভূমিকা পালন করতে পারে। আমাদের দেশে প্রায় ১৬ কোটি মানুষ আছে। আমরা প্রত্যেকে যদি কমপক্ষে একটি করে চারা গাছ রোপণ করি, তাহলে সহজেই আমাদের এ অভিযান সফল হতে পারে। সুখী ও সুন্দর জীবনযাপনের জন্য সকলকেই এই অভিযানে অংশগ্রহণ করা উচিত।

    বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি ও গৃহীত পদক্ষেপ:

    স্বাধীনতার পর থেকেই বাংলাদেশ সরকার বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন করে আসছে। তাছাড়া বেসরকারি পর্যায়েও নানান ক্ষেত্রে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে বন অধিদপ্তরকৃত ১৯৮২ সালে রাজশাহী, রংপুর ও দিনাজপুর জেলায় গৃহীত কমিউনিটি বনায়ন কর্মসূচি উল্লেখযোগ্য।
    এরপর ১৯৮৭-১৯৮৮ সালে প্রায় ৬০ টি জেলার বিভিন্ন থানায় বনায়ন ও নার্সারি উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য উদ্যোগ নেয়া হয়, বনায়ন সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে সচেতন করা হয়, ৮০ হাজার ব্যক্তিকে এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হয় এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে ছয় কোটি গাছের চারা বিতরণ করা হয়। এ উদ্যোগ গ্রহণ করার পর উপকূলীয় অঞ্চলে মানুষের মধ্যে বনায়নের ক্ষেত্রে ব্যাপক সাড়া পাওয়া যায়। ১৯৯৬ সালে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে ম্যানগ্রোভ জাতীয় গাছের চারা লাগানোর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয় এবং তা থেকে ১ লক্ষ ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে বনায়ন সম্ভব হয়। এভাবেই সরকারি ও বেসরকারি মাধ্যমের যৌথ উদ্যোগের মাধ্যমের বৃক্ষরোপণে নানান কর্মসূচি ও পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।

    ধরিত্রী সম্মেলন:

    ১৯৯২ সালে ব্রাজিলের রাজধানী রিও ডি জেনে রিও তে পরিবেশ বিষয়ক এক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় যা ধরিত্রী সম্মেলন নামে পরিচিত। এই সম্মেলনে সারা বিশ্বের ১৭০ টি দেশের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।  এই সম্মেলনে বৃক্ষ নিধন সম্পর্কে ও পরিবেশে এর বিরূপ প্রভাব সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করা হয়। তারা আশঙ্কা করেছিলেন যে, বিশ্বে যেভাবে বৃক্ষ নিধন চলছে এভাবে চলতে থাকলে পৃথিবী একটি বিরাট ক্ষতির সম্মুখীন হবে। তারা হিসাব করে দেখেন যে প্রতি সেকেণ্ডে প্রায় এক একর বনভূমি উজার হয়ে যাচ্ছে। সে সম্মেলনে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয় যে, একই সাথে বৃক্ষরোপন করতে হবে ও বৃক্ষনিধন কমিয়ে দেশ ও বিশ্বকে বাসযোগ্য করে তুলতে হবে।

    বন সংরক্ষণ:

    বৃক্ষরোপনের উদ্দেশ্যই হলো বনায়ন তৈরি এবং সেই বনভূমিকে টিকিয়ে রাখার মাধ্যমে বিশ্বকে রক্ষা করা। তাই শুধু বৃক্ষরোপণের মাধ্যমেই আমাদের দায়িত্ব শেষ হয়ে গেলে চলবে না। আমাদেরকে সেই বৃক্ষকে রক্ষা করার জন্যও উদ্যোগ নিতে হবে। আজকাল অনেক অসাধু ব্যবসায়ীরা অসাধু উপায়ে গাছপালা নিধন করছে ও পাচার করছে। এইভাবে চলতে থাকলে দেশের বনভূমি অচিরেই উধাও হয়ে যাবে। তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সেসব অসাধু ব্যবসায়ীদেরকে আইনের আওতায় আনতে হবে। তাহলে অন্যরাও আইনের প্রয়োগ দেখে নিজেরা সচেতন হবে এবং বৃক্ষরোপনে উদ্যোগী হবে। আর এভাবেই বন সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে।

    বনায়নের উপায়:

    বাংলাদেশে বনায়নের এক বিরাট সম্ভাবনা রয়েছে। সামাজিকভাবে এই বনায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হলে জনগণ বৃক্ষরোপনে সক্রিয় ভুমিকা পালন করতে পারবে। জনগণকে নানান জাতের গাছের বীজ প্রদান করা যেতে পারে যার ফলে সাধারণ জনগণ ও গ্রামবাসীরা নতুন নতুন ও বাহারি জাতের ফল, শস্য, খাদ্য, জ্বালানি পেয়ে গাছ লাগাতে উৎসাহী হবে। তাছাড়া জনগণের মাঝে বিনামুল্যে বীজ সরবরাহ, সংশ্লিষ্ট যন্ত্রপাতি ও সার সরবরাহের মাধ্যমে জনগনকে উৎসাহিত করা যেতে পারে। জনগনকে বৃক্ষরোপণের উপকারিতা ও বৃক্ষনিধণের অপকারিতা জানিয়ে সচেতন করা যেতে পারে। গ্রাম, মহল্লার সাধারণ জনগনকে প্রশিক্ষন ও বেতন প্রদানের মাধ্যমে এলাকা ও মহল্লার রাস্তার পাশে, মসজিদ-স্কুলের আঙিনায়, নদীর পাড়ে গাছ লাগানোর ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এই কর্মকাণ্ড দেখে সাধারণ জনগনও উৎসাহিত হবে। আর সেসব গাছ থেকে যা আয় হবে তা গ্রামবাসীদের মধ্যে ভাগ করে দেয়া হবে। তাছাড়া বিভিন্ন মিডিয়া যেমনঃ টিভি, পত্রিকা, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইত্যাদির মাধ্যমেও সচেতনতা সৃষ্টি ও বৃক্ষরোপনের উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। এভাবে বনায়ন করা হলে দেশের অনেক জায়গা আবার বনভূমিতে পরিণত হবে।

    বৃক্ষহীনতার অপকারিতা:

    বৃক্ষহীন পৃথিবী জীবনবিহীন মানুষের মতো। বৃক্ষ না থাকলে মানুষসহ পৃথিবীর কোনো জীবই বেঁচে থাকতে পারবে না। গাছপালা কমে গেলে বায়ুতে অক্সিজেনের অভাব দেখা দিবে। বায়ুতে বিভিন্ন ক্ষতিকর গ্যাসের পরিমাণ বেড়ে যাবে। পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়তে থাকবে। পানির অভাব দেখা দিবে ও বিশ্বের বিভিন্ন জায়গা মরুভূমির ন্যায় হয়ে যাবে। প্রকৃতি তার ভারসাম্য হারিয়ে ফেলবে ও অতিবৃষ্টি অনাবৃষ্টির মতো নানান দুর্যোগ দেখা দিবে। ফলে মানুষসহ অন্যান্য জীবের বেঁচে থাকা কষ্টকর হয়ে যাবে।

    বৃক্ষের বর্তমান অবস্থা:

    বাংলাদেশকে সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা বলা হয় একমাত্র বাংলাদেশের সবুজ ফসলের ক্ষেত ও বনভূমির জন্য। একসময় ছিল যখন বিদেশ থেকে অনেক পর্যটক আসতো শুধুমাত্র আমাদের দেশের সবুজ বনভূমি দেখতে। কিন্তু মানুষের অসচেতনতার কারণে ক্রমেই কমে যাচ্ছে বনভূমির পরিমাণ। আগের দিনের সেই আম, কাঁঠাল, সুপারি ও নারিকেলের বাগান আর তেমন দেখা যায় না। মানুষ গাছপালা কাটছে ঠিকই কিন্তু গাছপালা লাগানোর ক্ষেত্রে কারো ভ্রুক্ষেপ নেই। গাছের বদলে মানুষ এখন গড়ছে বড় বড় ইমারত। গাছপালা থেকে এখন মানুষের নিকট ইমারতের মূল্য বেশি হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই বর্তমানে এই অবস্থার কারণে পৃথিবী ক্রমেই হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে।

    বৃক্ষ সংরক্ষণে করণীয়:

    বিভিন্ন প্রকার যন্ত্রপাতির ভিড়ে আজ আমরা বৃক্ষরোপনের কথা ভুলতে বসেছি। কিন্তু বৃক্ষ ছাড়া আমাদের জীবন অচল। তাই বৃক্ষ সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার। একটি গাছ কাটলে তার বদলে দূটি গাছ লাগানোর প্রক্রিয়া সারা দেশে কার্যকর করতে হবে। দেশের প্রতিটি মিডিয়ায় বৃক্ষরোপণ সম্পর্কে অন্তত একটি অনুষ্ঠান প্রতি সপ্তাহে প্রচার করতে হবে। গ্রামের সাধারণ জনগনকে বৃক্ষরোপনের উপকারিতা ও বৃক্ষনিধনের অপকারিতা সম্পর্কে অবহিত করতে হবে। বৃক্ষরোপণ সম্পর্কে গৃহীত আইন সময়মতো কার্যকর করতে হবে। তবেই বৃক্ষ সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে।

    উপসংহার:

    নিঃসন্দেহে গাছপালা থেকে উপকারী বন্ধু আমাদের দ্বিতীয়টি নেই। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই যে আমাদের দেশে স্বাধীনতার পর থেকে বৃক্ষরোপনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও এখনো তা পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। তাই শুধু জাকজমকের সাথে বৃক্ষরোপন সপ্তাহ পালন করলেই হবে না, আমাদের সকলকে এক হয়ে কাজ করতে হবে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় এ বিষয়ে বিভিন্ন সেমিনার
    সিম্পোজিয়াম তৈরির মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করতে হবে ও দেশব্যাপী এই কার্যক্রমকে তুলে ধরতে হবে। তবেই দেশ আবার সুজলা, সুফলা, শস্য-শ্যামলা হয়ে উঠবে।  

    Related Posts:

    Disqus Comments
    © 2020 রচনা স্টোর - Designed by goomsite - Published by FLYTemplate - Proudly powered by Blogger